বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাড়ছে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার
ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় :
০৫-০১-২০২৫ ০৩:৪৩:৫১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৫-০১-২০২৫ ০৩:৪৫:৩৫ অপরাহ্ন
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দিচ্ছে দেশগুলো। পারমাণবিক শক্তি তার অন্যতম একটি উৎস। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও বিশ্বের দেশগুলো এখন দীর্ঘ মেয়াদে ও টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহে পারমাণবিক শক্তিতে ঝুঁকছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানায়, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাম্প্রতিক দেশগুলোতে নীতি সহায়তা বেড়েছে।
বিশ্বে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাড়ছে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারপ্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে অন্তত ১৪ দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার কমপক্ষে এক-চতুর্থাংশ এসেছে পারমাণবিক শক্তি থেকে। বর্তমানে ফ্রান্সের প্রায় ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে পারমাণবিক শক্তি থেকে। এ ছাড়া ইউক্রেন, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরির ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে পারমাণবিক শক্তি থেকে। জাপানও তার বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে এক-চতুর্থাংশ পেয়ে থাকে পরমাণু জ্বালানি থেকে। দেশটির বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে পারমাণবিক শক্তির ওপর ক্রমে নির্ভরশীলতা বাড়ছে।
আইইএ বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বে পারমাণবিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৪১৬ গিগাওয়াট। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সক্ষমতা বেড়ে হবে ৬৪৭ গিগাওয়াট। সংস্থার মতে, বর্তমান বিশ্বে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি জ্বালানি নিরাপত্তা ও কার্বন গ্যাস নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। যদিও আগামী বছরগুলোতে বিশ্ব জ্বালানির নতুন বাজারে প্রবেশ করবে।
আইইএর টেকসই প্রযুক্তি ও পূর্বাভাসবিষয়ক পরিচালক লরা কজি বলেন, ‘২০২৫ সালে আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎ সক্ষমতার নতুন রেকর্ড দেখতে পাব। আমরা দেখতে পাব অনেক দেশই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঝুঁকছে। এ নিয়ে দেশগুলো তাদের নীতির পরবর্তন করছে। মূলত চীন থেকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র সব দেশই দীর্ঘ মেয়াদে বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে পারমাণবিক শক্তিতে ঝুঁকছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী দিনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনসক্ষমতা বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেবে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। বিশেষত, ২০৩৫ সাল নাগাদ পারমাণবিক বিদ্যুতে সক্ষমতার ৪০ শতাংশই যোগ করবে চীন। ফলে ২০৩০ সাল নাগাদ চীন হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০টিরও বেশি দেশ জানিয়েছে, তারা ২০৫০ সাল নাগাদ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনসক্ষমতা বর্তমানের তিন গুণ করবে। বিশেষত ইউরোপীয় দেশগুলো এতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক সামা বিলবাও ওয়াই লিয়ন বলেন, ‘এই প্রতিবেদন স্পষ্ট করছে আগামী দিন নির্মল ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হবে পারমাণবিক শক্তি।
ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, জার্মানি, জাপান, স্পেন, সুইডেন, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ভারত, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, পাকিস্তান, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, রোমানিয়া, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, স্লোভেনিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইরান ও আর্মেনিয়া অন্যতম।
বড় প্রযুক্তির কম্পানিগুলো পারমাণবিক বিদ্যুতে ঝুঁকছে : গুগল বা মাইক্রোসফটের মতো বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এসব জায়ান্ট কম্পানি এআইয়ের তথ্যকেন্দ্রগুলো (ডাটা সেন্টার) সার্বক্ষণিক সচল রাখতে পারমাণবিক শক্তির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। মাইক্রোসফট ও গুগল এরই মধ্যে আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি সেরে ফেলেছে। একই পথে হেঁটেছে অ্যামাজনও। বিশ্বের এসব বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর দাবি, এতে যে অতিরিক্ত শক্তি মিলবে, তা অনলাইন তথ্যকেন্দ্রগুলোকে সচল রাখতে ব্যবহার করা হবে।
বাংলা স্কুপ/ ডেস্ক/ এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স